জামাতের নেতৃবৃন্দের ফাঁ'সির জন্য বর্তমান জামায়াত নেতারা দায়ী! -মীর কাসেম আলীর কন্যা
জায়াতের শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিযামী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, আবদুল কাদের মোল্লা, মো. কামারুজ্জামান, মীর কাশেম আলীর বিচারের নামে ফাঁসি দেয়ায় দলটির নেতাদের দায়ী এমন অভিযোগ তুলছে ওই নেতাদের পরিবারের সদস্যরা।
মীর কাসেম আলীর কন্যা তাহিরা তাসনিন বিনতে কাসেম বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতাদের রক্ষায় দলটির নেতারা যথাযথ পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি করেছেন। গত শনিবার নিজের ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ অভিযোগ করেন। একই ধরণের অভিযোগ করেছেন জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিযামীর পুত্র।
মীর কাসেম আলী জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ছিলেন। যুদ্ধাপরাধ মামলা শুরুর সময় তিনি আমেরিকায় ছিলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের বিচার শুরুর পর তিনি দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফেরার কয়েকদিন পর ২০১২ সালের জুন মাসে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৬ সালের ০৩ সেপ্টেম্বর রাতে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে তার মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। মীর কাশেমের পুত্র ব্যারিষ্টার মীর আহমদ বিন কাশেম আরমানকে দীর্ঘ ৮ বছর ঘুম করে ‘আয়নাঘরে’ রাখা হয়েছিল।
শিল্পপতি হিসেবে পরিচিতি মীর কাসেমকন্যা তাহিরা তাসনিন বিনতে কাসেম তার স্ট্যাটাসে বলেন, পারিবারিকভাবে তারা আমাদের অনেক কাছের, বিশেষ করে তাহের চাচা, মীর কাসেম আলীর। কিন্তু জামায়াত দল হিসেবে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি করেছে তাদের নেতাদের (মতিউর রহমান নিযামী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, আবদুল কাদের মোল্লা, মো. কামারুজ্জামান, মীর কাশেম আলীর) ফাঁসি আটকাতে। দিনের আলোর মতো যা আজ স্বচ্ছ। এটা তো সবাই একমত হবেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, শহিদি মর্যাদাই আমাদের একমাত্র সান্ত¡না এখন এবং আগামীতেও। এছাড়া আপনজনেরা তো শুধু ধোকা দিয়েছে।
তাহিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো লেখেন, জামায়াত আমাকে এমপি পদ অফার দিলেও আমি সারাজীবন এটা বলে যাব যে, নিজের হাতে হত্যা না করলেও আমাদের বাবাদের হত্যার পেছনে তারাও দায়ী। এটা আমার কাছে এক প্রকার ক্রাইম অব অমিশন। তিনি জামায়াতের বর্তমান নেতাদের উদ্দেশ্যে লেখেন, ‘তারপরও আপনারা ভালো থাকেন, আমার বাবাদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন ভালো থাকুক’।
প্রসঙ্গত, ক্রাইম অব অমিশন: আইনি ভাষায়, ক্রিমিনাল অমিশন বা অপরাধমূলক অবহেলা বলতে এমন অপরাধকে বোঝায়, যেখানে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আইনসম্মত কর্তব্য পালনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তা না করে অপরাধ সংঘটিত হতে পরোক্ষভাবে সাহায্য করে। অর্থাৎ আইনগতভাবে যদি কোনো ব্যক্তি সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও তার ওপর অর্পিত আইনি কর্তব্য পালন না করে এবং তার ফলে অপরাধজনিত ক্ষতি ঘটে, তাহলে একে একটি পূর্ণাঙ্গ অপরাধের বিকল্প হিসেবে গণ্য করা হয়।
এর আগে জামায়াতের সমালোচনা করে দলটির সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে মোহাম্মদ নাদিমুর রহমানও সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস দেন। নিজামী ১৯৯১ ও ২০০১ সালে জাতীয় সংসদের এমপি নির্বাচিত হন এবং বাংলাদেশ সরকারের কৃষি (২০০১-২০০৩) ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের (২০০৩-২০০৬) মন্ত্রী হিসেবে সফলতার সঙ্গে দ্বায়িত্ব পালন করেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদ-াদেশ পাওয়ার পর ২০১৬ সালের ১১ মে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।