সকল রেকর্ড খতিয়ান বাতিল? যেভাবে নতুন নিয়মে মালিকানা নির্ণয় হবে.....


সব খতিয়ান বাতিল?

🔍 সব খতিয়ান বাতিল?—জমির মালিকানা নিয়ে গুজব ও বাস্তবতার পূর্ণ চিত্র

✍️ লেখক: ভূমি বিষয়ক গবেষক ও বিশ্লেষক
📅 প্রকাশের তারিখ: ৩ জুন ২০২৫
🏷️ বিষয়: জমি, খতিয়ান, নামজারি, বিডিএস, স্মার্ট খতিয়ান


✅ ভূমিকা

সম্প্রতি বাংলাদেশে একটি প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে জোরালো আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে—“সব খতিয়ান বাতিল হয়ে গেছে”। এই দাবি নানা মানুষের মধ্যে উদ্বেগ, বিভ্রান্তি এবং অস্পষ্টতা তৈরি করছে।

এমন পরিস্থিতিতে জমির আসল মালিকানা কিভাবে নির্ধারিত হবে? নামজারি, খাজনা বা জমির দলিলের মূল্য কতটুকু থাকবে?
আজকের এই লেখায় আমরা যাচাই করব—গুজব কতটুকু, আর সত্য কতটুকু।


📜 খতিয়ান বলতে আসলে কী বোঝায়?

খতিয়ান হল একটি সরকার স্বীকৃত দলিল, যেখানে নির্দিষ্ট জমির মালিকানা, দখল, পরিমাণ ও অবস্থান সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষিত থাকে। এটি ভূমির মালিকানা নির্ধারণে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

বাংলাদেশে বর্তমানে যে সব খতিয়ান প্রচলিত:

  • সিএস (Cadastral Survey) — ব্রিটিশ আমলে প্রণীত (১৮৮৮–১৯৪০)

  • এসএ (State Acquisition Survey) — পাকিস্তান আমলে (১৯৫৬–১৯৬২)

  • আরএস (Revisional Survey) — স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে

  • বিএস (Bangladesh Survey) — সমসাময়িক কাগজভিত্তিক জরিপ

  • বিডিএস (Bangladesh Digital Survey) — আধুনিক ডিজিটাল জরিপ, চালু: ২০২১ থেকে


⚠️ “সব খতিয়ান বাতিল” — গুজবের উৎপত্তি কোথায়?

এই গুজবের পেছনে মূলত দুটি বিষয় কাজ করছে:

  1. বিডিএস (ডিজিটাল জরিপ) চালু হওয়ায় অনেকেই ভুলভাবে মনে করছেন, পুরনো খতিয়ান এখন বাতিল।

  2. কিছু ক্ষেত্রে নতুন স্মার্ট খতিয়ানের ভাষাগত পার্থক্য দেখে ধারণা তৈরি হয়েছে, পুরনো দলিল আর কার্যকর নয়।

👉 আসলে সত্য হলো:
সরকার এখন পর্যন্ত কোনো আইনি বা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে “সকল খতিয়ান বাতিল” ঘোষণা করেনি।


🔗 খতিয়ানের ধারাবাহিকতা ও প্রাসঙ্গিকতা

একটি জমির মালিকানা যাচাই করার সময়, বিভিন্ন পর্যায়ের খতিয়ান একসাথে বিবেচনায় আনা হয়। উদাহরণস্বরূপ:

  • সিএস খতিয়ানে যদি আপনার দাদার নাম থাকে,

  • এসএ ও আরএস খতিয়ানে যদি আপনার পিতার নাম থাকে,

  • এবং বিএস বা বিডিএস-এ যদি আপনার নাম থাকে,

তাহলে এই ধারাবাহিকতাই আপনার মালিকানা প্রমাণ করে।

📌 যদি আপনার দাদা জমি বিক্রি করে থাকেন, এবং ক্রেতা সেই জমির দখল ও নামজারি করে থাকেন, তবে আপনার পূর্বপুরুষের খতিয়ান অকার্যকর হয়ে যাবে—কিন্তু এটাকে “বাতিল” বলা যাবে না।


💳 স্মার্ট খতিয়ান ও বিডিএস: এক নতুন দিগন্ত

বর্তমানে চালু হয়েছে বিডিএস (Bangladesh Digital Survey)—একটি আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর জমি জরিপ ব্যবস্থা।

📌 বিডিএস স্মার্ট খতিয়ানের বৈশিষ্ট্য:

  • এক জমিতে একমাত্রিক মালিকানা

  • ডিজিটাল স্মার্ট কার্ড

  • স্বয়ংক্রিয় হালনাগাদ (ক্রয় করলে ‘যোগ’, বিক্রয় করলে ‘বিয়োগ’)

  • প্রতারণার সুযোগ কমে আসবে

🔒 বিশেষ তথ্য:
বিডিএস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে—আগামী ১০০ বছরের মধ্যে নতুন কোনো খতিয়ান চালু হবে না। কিন্তু তা পুরনো খতিয়ানগুলোকে অকার্যকর করছে না। বরং আগের খতিয়ানসমূহের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেই নতুন স্মার্ট খতিয়ান কার্যকর হচ্ছে।


📍 ভিন্নতাপূর্ণ অঞ্চল: পাহাড় ও সিলেট

পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে এখনো সিএস জরিপ হয়নি। সেখানে এসএ খতিয়ানই মালিকানা নির্ধারণের ভিত্তি। তবে ভবিষ্যতে বিডিএস এই এলাকাগুলোতেও কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।


💡 উপসংহার: আতঙ্ক নয়, সচেতনতা জরুরি

✅ এখন পর্যন্ত কোনো সরকারী ঘোষণায় ‘সকল খতিয়ান বাতিল’ হয়নি
✅ আপনার বৈধ দলিল, নামজারি এবং খতিয়ানের ধারাবাহিকতা থাকলে, জমির মালিকানা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
✅ বিডিএস স্মার্ট খতিয়ান হলো এক আধুনিক ও স্বচ্ছ পদ্ধতি—যা পুরনো কাগজপত্র বাদ দিয়ে নয়, বরং তাদের সহযোগী করে এগোচ্ছে।


📣 পরামর্শ

  • আপনার জমির সকল খতিয়ানের ফটোকপি ও দলিল সংরক্ষণ করুন।

  • বিডিএস এলাকায় থাকলে স্মার্ট খতিয়ান গ্রহণ করুন।

  • যেকোনো গুজবের আগে সরকারি সূত্র বা ভূমি অফিস থেকে নিশ্চিত হোন।


📬 আপনার মতামত জানান

এই লেখাটি সম্পর্কে আপনার মতামত, প্রশ্ন বা অভিজ্ঞতা জানাতে নিচে মন্তব্য করুন। আপনি চাইলে ভূমি বিষয়ক পরবর্তী ব্লগ পোস্টের জন্য নির্দিষ্ট কোনো টপিকও পরামর্শ দিতে পারেন।


📎 লেখাটি শেয়ার করুন:
ভূমি মালিকানা নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও সামাজিক মাধ্যমে এই লেখাটি শেয়ার করুন।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url