স্ত্রীকে কি বলে ডাকলে আল্লাহ খুশি হন, এবং স্ত্রীকে লক্ষী বলে ডাকা যাবে কি?
প্রশ্ন: স্ত্রীকে আদর করে
কি নামে ডাকলে আল্লাহ খুশি হবে? আমার স্ত্রীকে লক্ষী বলে ডাকতে পারবো?
উত্তর: কিছু শব্দ আমাদের পরিবারে আছে, সেই শব্দ গুলো অন্য ধর্মলম্বী উপশনা দেব-দেবীর নামের সাথে সংসিলিস্ট, সেই শব্দ গুলা কেবল বউ এর সাথে নয়, কোন ক্ষেত্রে আপনার জন্য ব্যাবহার করা যাবে না, এক জন মানুষ যতই কালো হোক আপনি মুসলিম হয়ে তাকে বলতে পারেন? তোমাকে কালীর মতো লাগছে? একজন যতই সুন্দর হোক আপনি তাকে বলতে পারেন না লক্ষীর মত লাগছে, কেননা এটা একটা ধর্মলম্বীদের উপশনার দেব-দেবী ।
একজন নারী যেমন স্বামী পছন্দ করে ও পুরুষের যেসব গুণাবলী নারীদের পছন্দ।
অথএব, এই নামে আমরা ডাকবো না , তবে বউকে নতুন নতুন নামে সুন্দর সুন্দর নামে মধুময় নামে ডাকা, এটা আল্লাহর রাসূল (সা: ) এর সুন্নাত ,
নবী করিম (স: ) স্ত্রীর নাম ছিল আয়েশা সিদ্দিকা (রা: ), নবীজি আদর করে ডাক দিতেন হুমাইরা (আপেল) , আপনি যদি বলেন আমার নবী তার স্ত্রীকে আদর করে ডাকতেন , আমি ও আমার স্ত্রীকে আদর করে ডাকতেছি তাহলে আপনি সুন্নাত পালনের ভাগিদার হবেন।
স্ত্রীকে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে তালাক দেওয়া যাবে কি?
দেনমোহর পরিশোধ না করে সহবাস করা যাবে কি?
অনেকে স্ত্রীকে ডাকে স্ত্রী আতংকে থাকে এবং নামটাও বদলে দিয়ে ডাকে সে ভয় পাই, স্ত্রীকে কখনো বিকৃত নামে ডাকা যাবে না, বাজে কথা বলে ডাকা যাবে না তুই তুকারী করা যাবে না। স্ত্রীকে আদর করে ডাকতে হবে রাসূলল্লাহ (সা: ) এর স্ত্রী হযরত আয়েশা (রা: ) কে আল্লাহর নবী বলেছেন তুমি যখন আমার প্রতি খুশি থাকো তখন আমি বুঝে ফেলি, তুমি যখন আমার উপর মন খারাপ করে থাকো তখন ও আমি বুঝে ফেলি, আয়েশা (রা: ) বলেছেন আপনি তো বুদ্ধিমান মানুষ কেমনে বুঝেন বলেন দেখি ?
নবীজি বলেছেন আমি যখন দেখি আমার আয়েশা দোয়া করতেছে “হে ইব্রাহিমের রব হে ইসমাইলের রব আমাকে মাপ করে দাও“ আমি বুঝি তোমার মনে কষ্ট আছে, আবার যখন বলেছো “হে মুহাম্মাদের রব আমারে মাপ করে দাও “তখন বুঝি আমার উপর খুশি আছো, নবীজির কথা শুনে আয়েশা (রা: ) হেসে দিয়ে বললেন রাসূলল্লাহ আপনি ঠিক বলেছেন (সুবাহানাল্লাহ ) তাদের মধ্যেও ভালোবাসা বিনীময় ছিলো।
ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক কর্তব্য
স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য কি?
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য কি?
🌸 স্ত্রীকে যে নামে ডাকলে আল্লাহ খুশি হন 🌸
✍️ ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে ভালোবাসা, সম্মান ও সুন্নাহর আলোকে
🔹 ভূমিকা
দাম্পত্য জীবন ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্পর্ক। এই সম্পর্কের ভিত্তি হওয়া উচিত ভালোবাসা, দয়া, ও পারস্পরিক সম্মান। অনেকেই জানতে চান:
“বউকে কী নামে ডাকলে আল্লাহ খুশি হন?”
এই প্রশ্নের উত্তর শুধু একটি শব্দ নয়, বরং একটা আচরণগত দৃষ্টিভঙ্গি — যেটা ইসলামী শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
💠 নবী (সা.) এর আদর্শ — সুন্নাহ থেকে শিক্ষা
প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) আমাদের জন্য সবচেয়ে উত্তম আদর্শ। তিনি তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, তা আমাদের জন্য অনুকরণীয়।
🥀 নবীজির ভালোবাসার ডাক “হুমাইরা”
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন:
“রাসূল (সা.) আমাকে আদর করে ‘হুমাইরা’ নামে ডাকতেন।”
📚 হাদীস সূত্র: মুস্তাদরাক আল-হাকিম, হাদীস ৪১৮৪
🔸 “হুমাইরা” অর্থ: লালচে গালবিশিষ্টা, যা ভালোবাসা ও সৌন্দর্যের প্রকাশ।
🔹 নবীজি স্ত্রীকে যে নামে ডাকতেন, তাতে মাধুর্য, ভালোবাসা ও সম্মান ছিল।
📖 কুরআনের নির্দেশনা
আল্লাহ তাআলা বলেন:
"আর তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।"
📖 সূরা আন-নিসা, আয়াত ১৯
🔸 এখানে সরাসরি কোনো নাম বলা হয়নি, কিন্তু সদ্ব্যবহার মানে হচ্ছে —
-
মিষ্টি ভাষায় কথা বলা
-
ভালোবাসার নামে ডাকা
-
সম্মান দিয়ে ব্যবহার করা
🕋 উত্তম চরিত্র ও স্বামীসুলভ আচরণ
হাদীসে এসেছে:
"তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে তার স্ত্রীর সঙ্গে উত্তম আচরণ করে।"
📚 তিরমিযী, হাদীস: ৩৮৯৫
📚 ইবনু মাজাহ, হাদীস: ১৯৭৭
➡️ একে অপরকে ভালো নামে ডাকা উত্তম আচরণেরই অংশ।
🌷 কী ধরনের নাম আল্লাহর কাছে প্রিয়?
✅ ১. ভালোবাসাময় নাম:
-
জান, সোনা, মেহের, রূপা, হুমাইরা, প্রিয়া
-
যার মাধ্যমে হৃদয়ের অনুভূতি প্রকাশ পায়
✅ ২. সম্মানসূচক উপাধি:
-
আমার রানী, জীবনসঙ্গিনী, ঘরের আলো, হৃদয়ের মালিকা
-
যাতে শ্রদ্ধা ও গুরুত্বের ছাপ থাকে
✅ ৩. আরবি বা বাংলা — ভাষা মুখ্য নয়:
-
আসল হলো, নামের মাধ্যমে যেন ভালোবাসা, দয়া, ও আন্তরিকতা প্রকাশ পায়।
📝 উপসংহার
বউকে যে নামে ডাকলে আল্লাহ খুশি হন, তা নির্ভর করে:
-
ভালোবাসা ও সম্মান আছে কি না
-
নবীজির সুন্নাহ অনুসরণ করা হচ্ছে কি না
-
সদ্ব্যবহার ও উত্তম চরিত্র প্রকাশ পাচ্ছে কি না
➡️ ইসলাম শুধু একটি শব্দ নয়, বরং আচরণ, মনোভাব ও আন্তরিকতাকেই মূল ভিত্তি হিসেবে দেখে।
🔗 সংক্ষিপ্ত সূত্রতালিকা:
বিষয় | সূত্র | মন্তব্য |
---|---|---|
হুমাইরা নামে ডাকা | মুস্তাদরাক আল-হাকিম, হাদীস ৪১৮৪ | আয়েশা (রা.)-কে নবীজি আদর করে ডাকতেন |
সদ্ব্যবহার | সূরা আন-নিসা (৪:১৯) | স্ত্রীদের প্রতি সুন্দর আচরণ করার নির্দেশ |
উত্তম চরিত্র | তিরমিযী, হাদীস ৩৮৯৫ | উত্তম স্বামী সে, যে স্ত্রীর প্রতি উত্তম আচরণ করে |
মিষ্টভাষী আচরণ | ইবনু মাজাহ, হাদীস ১৯৭৭ | সুন্নাহ অনুযায়ী স্ত্রীর প্রতি দয়াশীল হওয়া উচিত |
🌸 শেষ কথা
স্ত্রীকে এমন নামে ডাকো যাতে সে হাসে, তার মন ভরে ওঠে, তার হৃদয়ে স্বামী হিসেবে তোমার প্রতি ভালোবাসা বেড়ে যায় — ইনশাআল্লাহ, এতে আল্লাহ তাআলাও খুশি হবেন।