হযরত আলী (রাঃ) এর শাহাদাত ও মৃত্যুর ঘটনা | ইসলামের চতুর্থ খলিফার জীবনের শেষ অধ্যায়
⚔️ হযরত আলী (রাঃ) এর শাহাদাত: ইসলামী ইতিহাসের এক বেদনাদায়ক অধ্যায়
🌙 সংক্ষিপ্ত পরিচয়
হযরত আলী ইবন আবি তালিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ছিলেন ইসলামের চতুর্থ খলিফা, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চাচাতো ভাই ও জামাতা। তিনি ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম দিককার সাহাবিদের একজন এবং তাঁর সাহস, জ্ঞান ও ন্যায়বিচারের জন্য সমগ্র মুসলিম উম্মাহ তাঁকে ভালোবাসে।
🕋 জন্ম ও শৈশব
হযরত আলী (রাঃ) জন্মগ্রহণ করেন মক্কায়, কাবা ঘরের ভেতরে, খ্রিস্টাব্দ ৬০০ সালে (হিজরীর প্রায় ২৩ বছর আগে)। তাঁর পিতা ছিলেন আবু তালিব এবং মাতা ফাতিমা বিনতে আসাদ। ছোটবেলা থেকেই তিনি নবী করিম ﷺ এর ঘনিষ্ঠ পরিবেশে বেড়ে ওঠেন এবং শৈশবেই ইসলাম গ্রহণ করেন।
⚖️ খিলাফত ও শাসনকাল
তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান (রাঃ)-এর শাহাদাতের পর মুসলমানরা হযরত আলী (রাঃ)-কে খলিফা হিসেবে মনোনীত করেন।
তাঁর খিলাফতের সময় (হিজরি ৩৫–৪০) ইসলামী রাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও ফিতনা দেখা দেয় — যেমন জামাল যুদ্ধ ও সিফফিনের যুদ্ধ।
তবুও তিনি সর্বদা ন্যায়বিচার, সত্য ও ইসলামী ঐক্যের জন্য নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন।
⚔️ হত্যার পটভূমি
খারেজি নামক এক চরমপন্থী দল মনে করত যে, সিফফিন যুদ্ধের সময় হযরত আলী (রাঃ) ও তাঁর প্রতিপক্ষ মুআবিয়া (রাঃ) উভয়েই ভুল করেছেন।
তারা সিদ্ধান্ত নেয়, এই তিনজন (আলী, মুআবিয়া, ও আমর ইবন আস)–কে হত্যা করা হবে, যেন উম্মাহ ফিতনা থেকে মুক্ত হয়।
তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিল আবদুর রহমান ইবন মুলযিম — যে হযরত আলী (রাঃ)-এর হত্যাকারী হিসেবে ইতিহাসে পরিচিত।
🩸 শাহাদাতের ঘটনা
হিজরী ৪০ সালের ১৭ই রমজান, শুক্রবারের ভোরে, হযরত আলী (রাঃ) কুফা মসজিদে ফজরের নামাজ আদায়ের জন্য প্রবেশ করেন।
সেই সময় ইবন মুলযিম একটি বিষমিশ্রিত তরবারি দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করে।
আঘাতের পর হযরত আলী (রাঃ) কয়েকদিন অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন এবং অবশেষে ২১ রমজান, হিজরী ৪০ সালে (খ্রিস্টাব্দ ৬৬১) তিনি শাহাদত বরণ করেন।
🌹 দাফন
তাঁকে নজাফে (বর্তমান ইরাক) দাফন করা হয়, যেখানে আজও তাঁর মাজার মুসলিম বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান।
💬 হযরত আলী (রাঃ)-এর বাণী
হযরত আলী (রাঃ) ছিলেন জ্ঞান ও প্রজ্ঞার প্রতীক। তাঁর অনেক বাণী আজও দিকনির্দেশনা দেয়—
“যে নিজের মর্যাদা বোঝে না, অন্যের অবজ্ঞায় সে অপমানিত হয়।”
“জ্ঞান সম্পদ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ, কারণ জ্ঞান তোমাকে রক্ষা করে, আর সম্পদকে তোমাকেই রক্ষা করতে হয়।”
🌟 উপসংহার
হযরত আলী (রাঃ)-এর জীবন ও শাহাদাত আমাদের শেখায়—সত্য ও ন্যায়ের পথে দৃঢ় থাকতে হয়, এমনকি জীবন উৎসর্গ করেও।
তাঁর বীরত্ব, দয়া, ন্যায়পরায়ণতা ও জ্ঞানের আলো আজও মুসলমানদের হৃদয়ে চিরজাগরুক।